ইসরায়েলের সাম্প্রতিক এক বিমান হামলায় ইরানের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর, শুক্রবার রাতে ইরান ব্যাপক পরিসরে পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েলে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) থেকে ঘোষণা আসে, ''এই হামলা ছিল শত্রুর আগ্রাসনের কঠিন জবাব"।
ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রযুক্তি
সূত্রমতে, ইরান এই হামলায় ১৫০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: Fattah-1 ও Kheibar Shekan হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং Paveh ও অন্যান্য ক্রুজ মিসাইল, যা কম উচ্চতায় উড়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম।
কিছু ক্ষেপণাস্ত্রকে ইসরায়েলের Iron Dome, David's Sling এবং Arrow 3 প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিহত করলেও অনেক ক্ষেপণাস্ত্রই তেল আবিব এবং আশেপাশের এলাকায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়।
ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের চিত্র
BBC, Reuters, CNN সহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা গণমাধ্যম এবং পাশাপাশি কিছু ভারতীয় গণমাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়েছে তেল আবিব সহ আশেপাশের এলাকায় ইরানের মিসাইল বৃষ্টির ভিডিও। অধিকাংশ মিসাইল আঘাত হেনেছে তেল আবিবে অবস্থিত ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনার আশেপাশেই। এর মদ্ধে রয়েছে IDF সদর দপ্তর, এয়ার বেস, ইন্টেলিজেন্স- মোসাদের সদর দপ্তর। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে হামলায় হতাহতের খবর সম্পূর্ণ গোপন রাখতে বলা হয়েছে এবং গোটা ইসরায়েল জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
Times of Israel এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ইরানের মিসাইল হামলায় দুইজন নারীসহ ৩ জন নিহত এবং ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। তেল আবিব এবং রিশন লেওনের কিছু আবাসিক ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও সামরিক সদর দপ্তর “Kiryat”-এ আংশিক ক্ষতিসাধন হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
*ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এই হামলাকে "পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ঘোষণা" হিসেবে উল্লেখ করেছেন
*যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে সতর্ক করেছে: “মধ্যপ্রাচ্য যেন আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত না হয়”
*জাতিসংঘ শান্তির আহ্বান জানিয়েছে এবং দু'পক্ষকে সংযত থাকতে বলেছে
আগামী দিনের শঙ্কা
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা-পাল্টা হামলা শুধু ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ নয়, বরং এর ছায়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্য রাষ্ট্রগুলোকেও ঘিরে ফেলছে। হিজবুল্লাহ, হামাস এবং অন্যান্য ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয় ভূমিকা ইসরায়েলের জন্য বড় হুমকি বয়ে আনতে পারে।
ইরানের এই পাল্টা আক্রমণ শুধু একটি সামরিক জবাব নয়—এটি একপ্রকার কৌশলগত বার্তা। ইসরায়েল এখন যেকোনো সময় পুনরায় আক্রমণ করতে পারে বলে ধারণা করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। প্রশ্ন একটাই—এই উত্তেজনা কি আরেকটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে?
Post a Comment